মস্তফা উদ্দিন, বড়লেখা প্রতিনিধি: উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ প্রকল্প(আইজিএ) প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন বড়লেখা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত অনেক নারী। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ শিখে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এবং নিজের বলার মতো একটা গল্প তৈরি করতে পারছেন তারা।
প্রকল্পের আওতায় ফ্যাশন ডিজাইন (টেইলারিং) ক্রিস্টাল, ডেকোরেটেড মোমবাতি তৈরি ও হস্তশিল্পে, তিন মাস ব্যাপী সুবিধাবঞ্চিত নারীদের বিনা খরচে আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সরকার।
প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকে স্বাবলম্বী হয়ে হাল ধরছেন পরিবারের। স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ের পরিধি বাড়িয়ে অন্য সুবিধাবঞ্চিত নারীদের কর্মের সুযোগ করে দেয়ার।
শত প্রতিকূলতা আর নিজের ইচ্ছাশক্তির বলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুড়িরগুল গ্রামের রোকসানা আক্তার এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে ই-কমার্স এর মাধ্যমে ব্যবসা করে সফল ও স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস-২০২১সে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় সফল জয়িতা নারীর সম্মাননা পেয়েছেন।
আরেক সফল নারী বড়লেখা পৌরসভার হাটবন্দ এলাকার ফাতেমা জান্নাত। তিনি এ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে সফল হয়েছেন। ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করেন।
তিনি বলেন,নিজেদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। এজন্য নারীদের নিজের পায়ে দাড়াতে হবে। আর স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা। দেশের অগ্রযাত্রায় নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। সরকার ও নারীদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। দেশের অনেক নারী আজ তাঁদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সৃজনশীল কর্মের সর্বোত্তম প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যেমন অনেক নারী অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, পেয়েছেন সামাজিক মর্যাদা,পাশাপাশি তারা অন্য নারীদেরও কর্মসংস্থান তৈরী করছেন।
প্রকল্পের আওতায় প্রতি কোর্সে দুইটি ট্রেডে ২৫ জন করে ৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে উপজেলা মহিলা-বিষয়ক কর্মকতার কার্যালয় বড়লেখা। ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ১২টি ব্যাচে প্রশিক্ষন নিয়েছেন ৫৫০ জন। সফল হয়েছেন অনেকেই।
প্রশিক্ষণের জন্য আবারও ১৩ তম ব্যাচে দুইটি ট্রেডে নেয়াহচ্ছে ৫০ জন। নিজেদের পায়ে দাড়াতে প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন প্রায় ৩ শত নারী। এদের মধ্যে থেকে যাচাই-বাচাই করে নেয়া হবে ৫০জনকে। প্রত্যেক ট্রেডে বিনামূল্যে ২৫ জন করে ৫০ জন প্রশিক্ষনার্থীকে প্রশিক্ষণ দেয়াহবে।
ক্রিস্টাল শোপিস প্রশিক্ষক অসিম চক্রবর্তী বলেন,(আইজিএ) প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র পরিবারের নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই সফল হচ্ছেন। ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের হাল ধরেছেন। তারা আত্মনির্ভরশীল হতে শিখছে। নারীর প্রতি সরকারের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আজ তারা এগিয়ে যাচ্ছে।
ফ্যাশন ডিজাইন (টেইলারিং) প্রশিক্ষক সাহেদা আক্তার বলেন, নারীরা এখন নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে শিখছে। (আইজিএ) প্রকল্পের আওতায় তাদের ফ্রী প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে।প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা স্বাবলম্বী হচ্ছে। আমরা তাদের আন্তরিকতার সাথে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাকি। ১২ তম ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে, এখন ১৩ তম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের ভর্তি নেয়া হচ্ছে।
প্রশিক্ষণার্থীদের তিন মাসে ৬০ দিনব্যাপী প্রত্যেকদিন ৬ঘন্টা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণার্থীরা হাজিরা প্রতি বর্তমানে ২০০ টাকা করে তিন মাসব্যাপী ক্লাস করার পর ১২০০০ হাজার টাকাসহ সনদপত্র পেয়ে থাকেন । এ টাকা ও সনদপত্র পেয়ে অনেক নারীরাই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছেন ।
এ প্রকল্পের কর্মসূচি সম্পর্কে বড়লেখা উপজেলা মহিলা-বিষয়ক কর্মকর্তা শামছুন্নাহার বলেন, সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র নারীদের উন্নয়নের জন্য সরকার নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের আইজিএ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তাদের কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করাহচ্ছে। তবে নারীদের আত্মবিশ্বাস ও সচেতন হতেহবে । যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুদানের ব্যবস্থা রয়েছে।