হাজারো পাখির কলতানে মুখরিত ছালিয়া’র পাখি বাড়ি

আশরাফ জুয়েল:বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই হরিণ বানরের অভ্যার্তনায় বিস্ময়ে অভিভূত হতেই হয়। এ যেন পশু পাখির অভয়ারন্য।! নাম না জানা চেনা-অচেনা হাজারো পাখির কলতানে মুখরিত এই বাড়ি। বাড়ির ভেতরের গাছে গাছে পাখিদের দল। তাদের নিজস্ব কথোপকথন মাতিয়ে রেখেছে পুরো বাড়িটি।

সিলেট সদর উপজেলার ছালিয়া গ্রামে এই পাখি বাড়ি অবস্তিত। বাড়ীটির আসল নাম নূর আনোয়ারবাদ। সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের পাশ ঘেরা সালুটিকরে এর অবস্থান। প্রায় তিন একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই বাড়িটিকে লোকে চেনে নুরুদ্দিনের ‘পাখি বাড়ি’ নামে। দোতলা এই বাড়িটির সামনেই শান বাঁধানো ঘাটসহ একটি পুকুর। আর পুরো বাড়ি জুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গাছ।

পাখি প্রেমিক নুরুদ্দিন ব্যক্তি উদ্যোগে নিজের বাড়িতে তৈরি করেছেন পাখির এই বিশাল অভয়ারন্য। মানুষ যখন নির্বিচারে পাখি নিধন করছে,টিক তখন পাখিরাই নিশ্চিন্ত আবাস গড়ে নিয়েছে এই বাড়িটিতে। ২০ বছর ধরে পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে পাখি বাড়ি। দিনে দিনে পাখির আনাগোনা বাড়ছেই। তবে হঠাৎ করেই তৈরি হয়নি এই পাখি নিবাস। এর পেছনে আছে নুরুদ্দিনের পাখিপ্রেমের গল্প।

নুরুদ্দিন বাজারে গেলেই পাখি কিনতেন। কখনো এক জোড়া, কখনো আবার চার-পাঁচ জোড়া। পাখি কিনে বাড়িতে এনে সেগুলোকে ছেড়ে দিতেন। সবাইকে বলতেন, “পাখির জায়গা খাঁচায় না, আকাশে।” কিছু পাখি উড়ে মিলিয়ে যেত আকাশে, আর কিছু পাখি থেকে যেত নুরুদ্দিনের বাড়ির গাছগাছালিতে। সেই থেকে যাওয়া পাখিদের দেখাদেখি আরো পাখি আসতে থাকে, ক্রমশ বাড়তে থাকে পাখির সংখ্যা। একসময় পাখিদের ভিড়ে নুরুদ্দিনের বাড়ি হয়ে যায় ‘পাখি বাড়ি’। পাখিদের নিরাপত্তায় নজর দেন নুরুদ্দিন। পাখি চুরি ঠেকাতে বাড়িতে বসান পাহারা।

যেদিকে চোখ যায় পাখি আর পাখি, যেন পাখিদেরই বাড়ি। পাখি বাড়িতে বক জাতীয় পাখিই বেশি। সাদা বকে ছেয়ে আছে গাছের ডাল পালা। উড়ে যায়, উড়ে আসে। বাদুড় প্রজাতি পাখিরা উলটো হয়ে ঝুলে থাকে। লাল বক, কানি বক, পানিকৌড়ি, বাদুড়, বাবুই ঘর বেঁধেছে, এই পাখি বাড়িতে। পাখিরা সারাদিন বিলে খাবার খুঁজে সন্ধ্যায় নুরুদ্দিনের বাড়িতে এসে আড্ডা জমায়। তাই পাখি দর্শনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে বিকেল থেকে সন্ধ্যা।

পাখিপ্রেমী নুরুদ্দিন এখন বেঁচে নেই। তার তিন ছেলে লন্ডনে। নুরুদ্দিনের মৃত্যুর পর পাখি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর আর এক ছেলে এমদাদুল হক। পাখি দেখতে আসা পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিতে বাড়ির আঙিনায় হরিণ, বানরসহ অন্যান্য পশু-পাখি পালন করেন পাখিপ্রেমী এমদাদ।

তাই হতে পারে পাখিপ্রেমীদের জন্য একটি দারুন জায়গা ‘পাখি বাড়ি’। একবার ঘুরে আসতে পারেন পাখিদের এই অভয়ারণ্য।

ভিডিও দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন, শেয়ার করে অন্যদেরকে দেখাতে সহযোগিতা করুন।