ফিল্মি স্টাইলে তুলে নিয়ে পত্রিকা এজেন্সির ম্যানেজারকে নির্যাতন

বড়লেখ প্রতিনিধি: বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিগে বড়লেখা পৌরশহরের রেলস্টেশন রোড এলাকা থেকে বড়লেখা পত্রিকা এজেন্সির ম্যানেজার সজল চন্দ্র দেবনাথকে (৩৫) ফিল্মি স্টাইলে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক।

এসময় তার ওপর চলে অমানসিকভাবে কিল, ঘুষি, চড় ও লাথি। প্রথমে ভয়ে কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে না আসলেও মারতে মারতে কিছু দূর নেওয়ার পরে কয়েকজন ব্যবসায়ী শ্রমিকদের কবল থেকে সজলকে রক্ষা করেন। সজলকে তুলে নিয়ে অমানসিক নির্যাতনের সেই দৃশ্য ধরা পড়েছে সেখানকার কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায়।

অভিযোগ ওঠেছে, এজেন্সি সংলগ্ন এক পত্রিকা ক্রেতার মোটরসাইকেলের সাথে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির জের ধরে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় পত্রিকা এজেন্সির পাশ থেকে সজল চন্দ্র দেবনাথকে তুলে নিয়ে অমানসিক নির্যাতন চালিয়েছে বড়লেখা মধ্যবাজার স্ট্যান্ডের কয়েকজন অটোরিকশা শ্রমিক।

আহত সজল দেব নাথকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই আহত সজল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আহত সজল বড়লেখা সদর ইউপির পূর্ব হাটবন্দ এলাকার মৃত সুধির চন্দ্র নাথের ছেলে।

এদিকে দিন-দুপুরে বড়লেখা পত্রিকা এজেন্সির ম্যানেজার সজল চন্দ্র দেবনাথকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারা অবিলম্বে জড়িত অটোরিকশা শ্রমিকদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে বড়লেখা পৌরশহরের রেলস্টেশন রোডে পত্রিকা এজেন্সির পাশে পত্রিকা কিনতে আসা এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এ নিয়ে চালক ও মোটরসাইকেল আরোহীর মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এসময় পত্রিকা এজেন্সির ম্যানেজার সজল চন্দ্র দেবনাথ এজেন্সি থেকে বেরিয়ে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করলে সিএনজি চালক তার সাথেও ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে অটোরিকশাচালক চলে যান। এর প্রায় আধঘন্টা পর সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক শ্রমিক নেতা প্রায় অর্ধশতাধিক অটো চালককে সঙ্গে নিয়ে পত্রিকা এজেন্সির পাশ থেকে এজেন্সির ম্যানেজারকে লাথি, কিল, ঘুষি মারতে মারতে নিয়ে যেতে থাকেন। অটোরিকশা চালকদের সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে বাঁচাতে প্রথমে স্থানীয় কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পাননি। মারতে মারতে অনেক দূর নিয়ে যাওয়ার পথে কয়েকজন ব্যবসায়ী এগিয়ে তাদের হাত থেকে সজলকে উদ্ধার করেন। তাদের আক্রমণে সজল দেবনাথের কানের পর্দা ফেটে যায়। মাথায় কিল ঘুষির আঘাতে চরম জখম হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
এদিকে সজলকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের দৃশ্য ধরা পড়েছে বড়লেখা পৌরশহরের রেলস্টেশন রোড এলাকার কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায়।

ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধশতাধিক অটোরিকশা শ্রমিক দৌঁড়ে বড়লেখা পৌরশহরের রেলস্টেশন রোড এলাকার দিকে যাচ্ছেন। সেখান থেকে তারা সজলকে ধরে অমানসিকভাবে কিল, ঘুষি, চড় ও লাথি মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছেন। বাঁচার জন্য আকুতি করছেন সজল।

স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হঠাৎ কয়েকজন সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক বড়লেখা পত্রিকা এজেন্সির ম্যানেজার সজলকে তুলে নিয়ে যায়। এসময় তারা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। সেই সঙ্গে কিল, ঘুষি, চড় ও লাথি মারতে থাকে। প্রথমে ভয়ে আমরা তাঁকে বাঁচানোর সাহস করিনি। পরে কয়েকজন ব্যবসায়ী তাদের কবল থেকে সজলকে রক্ষা করেছেন। তারা বলেন, তারা দিন-দুপুরে একজন মানুষকে এভাবে তুলে নিয়ে যেভাবে নির্যাতন করেছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমরা অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি কঠিন শাস্তির দাবি জানাই।
বড়লেখা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি লাল মিয়া শুক্রবার বিকেলে বলেন, ঘটনাটা শোনার পরই আমরা আহত পত্রিকা এজেন্সির ম্যানেজার সজলকে আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখেছি। বিষয়টি আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি।

বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ শুক্রবার বিকেলে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। থানায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।